ক্লাস নাইন এ পড়ি তখন, আমার বাসার সামনে ছোট একটা বইয়ের দোকান খোলেন মধ্যবয়সী এক আক্কেল। কি মনে করে ভিতরে ঢুকে বই দেখতে থাকলাম। বেশিরভাগ পুরাতন বই নিউজ প্রিন্ট এ ছাপানো। কৌতুহলবসত কয়েকটা বইয়ে চোখ আটকে গেল। বাংলাদেশী বেশিরভাগ বই এ লক্ষ্য করলাম পৃষ্ঠার চারপাশে প্রায় এক ইঞ্চির উপরে গ্যাপ। কিন্তু কলকাতায় ছাপানো এই বইগুলোর পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা। খুব আগ্রহ হল। ফ্ল্যাপ এর লেখা পড়লাম। 'গর্ভধারিণী' বই দিয়ে সমরেশ মজুমদারের সাথে সেই থেকে পরিচয়।
পড়তে গিয়ে প্রথমে বেশ বেগ পেতে হল। একে তো কলকাতার লেখক তার ওপর আমার শোচনীয় বাংলা পড়ার দক্ষতা। তবে লেগে ছিলাম। কয়েকবার পড়তে হতো কয়েক লাইন বুঝতে। তবুও পড়তাম দিন-রাত একাকার করে। শেষ করলাম, কতদিন লেগেছে মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম কয়েক সপ্তাহ। চার তরুণ-তরুণীর সমাজ ব্যবস্থা বদলানোর আকাঙ্ক্ষা আর সংগ্রাম আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল।সে সময়। এরপরের গল্প আসলে অনেক লম্বা। অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী, জয়িতাদের এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলে ছিলেন লেখক তা ভেবে বিস্ময় হয়। মজার ব্যাপার হল আমি পুরাতন বই বেশি কিনতাম। নীলক্ষেত ঘুরে খুঁজতাম সেই বইগুলো। মধুর স্মৃতি!
সমরেশ এর লেখা আমাকে ভালো কিছু করার সাহস জুগিয়েছে। আমার জীবনের খুব সুন্দর অধ্যায় "ভলিন্টিয়ারিং" বোধহয় তাঁর লেখনির দারা অনেকটা অনুপ্রাণিত। কলকাতার অলি-গলি কলেজ স্ট্রিট, জলপাইগুড়ির চা বাগান, দার্জিলিং এর নয়নাভিরাম প্রকৃতি সবকিছু যেন জীবন্ত করে তুলেছিলেন তাঁর লেখায়। বাস্তবে না থেকেও যেন চোখ বুজলেই দেখতে পেতাম সেই অপরূপ প্রকৃতি। একজন লেখকের সার্থকতা বোধহয় এখানেই। আমার খুব ইচ্ছা কোনদিন দার্জিলিং, গ্যাঙটক এর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। ডুয়ার্সের সেই চা বাগান স্মৃতির পাতায় এখনো জমা আছে। বই মানুষকে ভাবতে শেখায়। ভাল মানুষ হওয়ার উপাদান বাতলিয়ে দেয়।
সমরেশ এর লেখায় তিনি কত বিস্তর ভাবে প্রকৃতি, দেশ, রাজনীতি, প্রেম, ভালবাসা, সংগ্রাম এবং জীবনের বাস্তব রূপ তুলে ধরেছেন।
জীবনের কিছু কঠিন সময়ে সাতকাহন এর এই কয়েকটি লাইন আমার নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শিখিয়েছিল-
"তুমি পথিক, পথ তোমার। সেই পথ কীভাবে তৈরি হয়েছে তা তোমার জানার কথা নয়। পথিকের কাজ পথ ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।"
সেই পথিক আমি এখনো পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি।
বিদায় প্রিয় লেখক। ভাল থাকবেন।
১১ই মে, ২০২৩ । বোরে, নরওয়ে
পড়তে গিয়ে প্রথমে বেশ বেগ পেতে হল। একে তো কলকাতার লেখক তার ওপর আমার শোচনীয় বাংলা পড়ার দক্ষতা। তবে লেগে ছিলাম। কয়েকবার পড়তে হতো কয়েক লাইন বুঝতে। তবুও পড়তাম দিন-রাত একাকার করে। শেষ করলাম, কতদিন লেগেছে মনে নেই। তবে এটা মনে আছে যে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম কয়েক সপ্তাহ। চার তরুণ-তরুণীর সমাজ ব্যবস্থা বদলানোর আকাঙ্ক্ষা আর সংগ্রাম আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল।সে সময়। এরপরের গল্প আসলে অনেক লম্বা। অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী, জয়িতাদের এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলে ছিলেন লেখক তা ভেবে বিস্ময় হয়। মজার ব্যাপার হল আমি পুরাতন বই বেশি কিনতাম। নীলক্ষেত ঘুরে খুঁজতাম সেই বইগুলো। মধুর স্মৃতি!
সমরেশ এর লেখা আমাকে ভালো কিছু করার সাহস জুগিয়েছে। আমার জীবনের খুব সুন্দর অধ্যায় "ভলিন্টিয়ারিং" বোধহয় তাঁর লেখনির দারা অনেকটা অনুপ্রাণিত। কলকাতার অলি-গলি কলেজ স্ট্রিট, জলপাইগুড়ির চা বাগান, দার্জিলিং এর নয়নাভিরাম প্রকৃতি সবকিছু যেন জীবন্ত করে তুলেছিলেন তাঁর লেখায়। বাস্তবে না থেকেও যেন চোখ বুজলেই দেখতে পেতাম সেই অপরূপ প্রকৃতি। একজন লেখকের সার্থকতা বোধহয় এখানেই। আমার খুব ইচ্ছা কোনদিন দার্জিলিং, গ্যাঙটক এর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। ডুয়ার্সের সেই চা বাগান স্মৃতির পাতায় এখনো জমা আছে। বই মানুষকে ভাবতে শেখায়। ভাল মানুষ হওয়ার উপাদান বাতলিয়ে দেয়।
সমরেশ এর লেখায় তিনি কত বিস্তর ভাবে প্রকৃতি, দেশ, রাজনীতি, প্রেম, ভালবাসা, সংগ্রাম এবং জীবনের বাস্তব রূপ তুলে ধরেছেন।
জীবনের কিছু কঠিন সময়ে সাতকাহন এর এই কয়েকটি লাইন আমার নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শিখিয়েছিল-
"তুমি পথিক, পথ তোমার। সেই পথ কীভাবে তৈরি হয়েছে তা তোমার জানার কথা নয়। পথিকের কাজ পথ ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।"
সেই পথিক আমি এখনো পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি।
বিদায় প্রিয় লেখক। ভাল থাকবেন।
১১ই মে, ২০২৩ । বোরে, নরওয়ে